Post 2
Post 2
প্রশ্ন ১। দর্শনের প্রধান প্রধান শাখাগুলি কী কী? প্রতিটি শাখার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বিবৃত করো।
অথবা, দর্শনের প্রধান শাখাগুলি কী কী? শাখাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
(নমুনা প্রশ্ন : . . ২০০৫] ১-৪
উত্তর। দর্শনের প্রধান প্রধান শাখাগুলি হল— জ্ঞানবিদ্যা, অধিবিদ্যা, তর্কবিদ্যা এবং নীতিবিদ্যা → জ্ঞানবিদ্যার সংজ্ঞা ঃ দর্শনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অঙ্গের মধ্যে জ্ঞানবিদ্যা অন্যতম। জ্ঞানের অন্যতম শাখারুপে আধুনিককালে জ্ঞানবিদ্যা প্রাধান্য লাভ করেছে। যে বিজ্ঞান জ্ঞানের উৎপত্তি, জ্ঞানের স্বরূপ, সম্ভাবনা সীমা এবং বৈধতা নিয়ে আলোচনা করে তাকে জ্ঞানবিদ্যা বলা হয়। জ্ঞান কী আদৌ সম্ভব? জ্ঞানের উৎপত্তি কীভাবে হয়? যথার্থ জ্ঞানের শর্ত কী কী? জ্ঞানের সীমা বা পরিধি কতদূর? চরমতত্ত্বের জ্ঞান আদৌ সম্ভা কী? যদি সম্ভব হয় তাহলে কী উপায়ে আমরা এই জ্ঞান লাভ করে থাকি? এ সকল প্রশ্ন ও সমস্যা নিয়ে জ্ঞানবিদ্যা আলোচনা করে। দার্শনিক আলোচনার প্রারম্ভেই জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা প্রয়োজন।
→ অধিবিদ্যার সংজ্ঞা : অধিবিদ্যা দর্শনের অন্যতম প্রধান শাখা। এ হল এমন বিজ্ঞান যা জ্ঞান, জীবন ও ঈশ্বরের স্বরূপ নির্ধারণ করতে চেষ্টা করে। পরিদৃশ্যমান জড় জগতের পশ্চাতে বা অন্তরালে কোনো অতীন্দ্রিয় সত্তা আছে কী না ? যদি থাকে তাহলে সেই অতীন্দ্রিয় সত্তার স্বরূপ কী? পরিদৃশ্যমান জড় জগতের সঙ্গে অতীন্দ্রিয় সত্তার সম্বন্ধ কী?—ইত্যাদি প্রশ্ন ও সমস্যা নিয়ে অধিবিদ্যা আলোচনা করে। জগৎ, জীবন ও ঈশ্বরের স্বরূপ নির্ধারণ করা অধিবিদ্যার কাজ। দেশ, কাল, কার্যকারণ সম্পর্ক, জড়, মন, প্রাণ—প্রভৃতির স্বরূপ নির্ধারণও অধিবিদ্যার কাজ। সাধারণভাবে বলা যায়, অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় তিনটি, যথা—বিশ্ব, আত্মা ও ঈশ্বরের স্বরূপ।
তর্কবিদ্যার সংজ্ঞা ঃ তর্কবিদ্যা হল ভাষায় প্রকাশিত তর্কপদ্ধতি বা অনুমান সম্বন্ধীয় বিদ্যা। তর্কবিদ্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা যেতে পারে যে, যে ব্যবহারিক শাস্ত্র অনুমান এবং তার সাহায্যকারী প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং ভ্রান্তিকে পরিহার করে সত্যতা লাভে সহায়তা করে তাকে তর্কবিদ্যা বলে। তর্কবিদ্যা হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। সত্যতা তর্কবিদ্যার আদর্শ। কী কী নিয়ম পালন করলে অনুমান যথার্থ হয় তর্কবিদ্যা তা নিয়ে আলোচনা করে। অনুমানসংক্রান্ত নিয়মাবলীর জন্য সমস্ত বিজ্ঞান তর্কবিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে বলে তর্ক বিজ্ঞানকে সমস্ত বিজ্ঞানের সেরা বিজ্ঞান বলা হয়। যথার্থ চিন্তার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মগুলির আলোচনা
করে তর্কবিদ্যা। তর্কবিদ্যাকে তর্কপদ্ধতি বা অনুমান ছাড়াও কতকগুলি আনুষঙ্গিক বিষয়, যেমন, সংজ্ঞার্থ (Definition), বিভাগ (Division), শ্রেণিবিভাগ (Classification), নামকরণ (Naming) ইত্যাদি আলোচনা করতে হয়।
→ নীতিবিদ্যার সংজ্ঞা : নীতিবিদ্যা হল দর্শনের একটি শাখা। লিলি (Lillie) নীতিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “নীতিবিদ্যা হল সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞান মানুষের আচরণ, উচিত ও অনুচিত, ভালো কী মন্দ, সত্য কী মিথ্যা বা অনুরূপভাবে বিচার করে। নীতিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় ঐচ্ছিক ক্রিয়া এবং ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কতকগুলি বিষয় যেমন—কামনা, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় প্রভৃতি। নীতিবিজ্ঞান নৈতিক আদর্শের স্বরূপ, নৈতিক বিচারের প্রকৃতি, নৈতিক বাধ্যতাবোধের উৎস প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। মানবজীবনের পরমার্থ নির্ণয়ই নীতিবিজ্ঞানের প্রধান কাজ।


Comments